হেরেও জিতে যাওয়া মানুষকে বাজিগর বলে', শাহরুখ খানের ঠোঁটের এই সংলাপ এখনো মুখে মুখে ফিরছে
বলিউডের দুনিয়ায়। আর জিতেও হেরে যাওয়া মানুষকে কী বলে? খুব সম্ভবত ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। হরিষে বিষাদের এই অভিজ্ঞতা যে তাঁর হয়েই চলেছে, একের পর এক। হলো ঘানার
সঙ্গেও, ফুটবল তীর্থে
বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে। ২-১ গোলের জয়
পর্তুগালের, রোনালদো নিজে
গোলও করেছেন। তবু যে মাঠ ছাড়তে হয়েছে মাথা নিচু করে।
জার্মানির কাছে
প্রথম ম্যাচে ৪-০ গোলের বড় হারটাই আসলে সমীকরণটা কঠিন করে দিয়েছিল পর্তুগালের, এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২-২ গোলের ড্রতে
আড়াই প্যাঁচের অঙ্ক। ঘানার সঙ্গে
শুধু জিতলেই চলবে না, বাড়াতে হবে
গোলের ব্যবধান এবং তাকিয়ে থাকতে হবে জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের দিকে। তা নিজেদের কাজটা ভালোভাবেই করার চেষ্টা করছিলেন পউলো বেনতোর
শিষ্যরা, অন্তত রোনালদো
করেছেন যথাসাধ্য চেষ্টা। কখনো তাঁর হেড
ভূমিশয্যা নিতে নিতে ফিরিয়ে দিয়েছেন ঘানার গোলরক্ষক, কখনো বা গোলে নেওয়া শটটা ইঞ্চিখানেকের জন্য মিস করে গেছে নিশানা। ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, 'আজ (বৃহস্পতিবার) অন্তত চারটি গোল করতে পারতেন রোনালদো।' চারটি হয়নি, হয়েছে মাত্র একটি। ঘানার
গোলরক্ষকের পাঞ্চ করা বল ফিরে এসেছে রোনালদোর পায়েই, সেখান থেকে জোরালো শটে আবারও বল পাঠিয়েছেন জালে। রোনালদোর ভাগ্য যদি সুপ্রসন্ন হতো, তাহলে হয়তো বদলে যেত 'ইউরোপের ব্রাজিল'-এর ভাগ্যও, 'আমরা জেতার চেষ্টা করেছি এবং জিততে পেরেছি। আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছিলাম, কিন্তু সবগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। আমাদের
সমীকরণটা কঠিন ছিল, কিন্তু যতগুলো
সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম, সেই বিচারে বলা
যায় কাজটা অসম্ভব ছিল না।' বিশ্বকাপ অবশ্য একেবারে খালি হাতে ফেরাচ্ছে না
পর্তুগিজ যুবরাজকে, নিয়ে যাচ্ছেন
শেষ ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা।
বলতে গেলে একা
হাতেই পর্তুগালকে বিশ্বকাপে নিয়ে এসেছিলেন রোনালদো। প্লে-অফ
পর্বে পর্তুগালের সামনে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের সুইডেন, নিজেদের মাঠে ৮২ মিনিটে একমাত্র গোলটা করে রোনালদোই
দলতে জেতান প্রথম লেগে। এরপর সুইডেনে
ফিরতি লেগে ইব্রার জোড়া গোলের জবাব হ্যাটট্রিকে দিয়ে 'সিআরসেভেন' দলকে এনে দিলেন বিশ্বকাপের টিকিট। সেই
বিশ্বকাপে তাঁর নিজেরই খেলা নিয়ে কত ধোঁয়াশা, চোট নিয়েও চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালটা খেলেছিলেন 'দেসিমা' জয়ের নেশায়। তাতেই বোধ হয়
চোটটা বাড়ল, যার প্রভাব দেখা
গেছে পর্তুগিজ যুবরাজের মাঠের খেলায়। সেই হরিণের মতো
ছুটে যাওয়া নেই, শরীরে ক্লান্ত
ভাব আর উধাও সেই আগ্রাসী মেজাজটাও। ঘানার সঙ্গে
জয়ের পর, বিশ্বকাপে প্রথম
জয়ের পরও তাই নেই সেই বুনো উল্লাস, যা দেখেছিল ২৪ মে'র লিসবনও। প্রায় মাসখানেক পর ব্রাসিলিয়ায় সেই লোকটাই মুখ ঢাকছেন হতাশায়।
আত্মঘাতী গোলে
পিছিয়ে পড়ার পর আসামোয়াহ জিয়ানের গোলে ঘানার সমতা। সেই
সমতা ঘুচেছে ৮০তম মিনিটে করা রোনালদোর গোলে, অনেকগুলো সুযোগের একমাত্র এটাই পৌঁছেছিল ঠিক গন্তব্যে। রোনালদোই পরে বলছিলেন, 'আমরা জানতাম, ৩ গোলের
ব্যবধানে জিততে হবে, সেই সঙ্গে
তাকিয়ে থাকতে হবে জার্মানির ম্যাচের দিকে। ম্যাচ শেষে মনে
হচ্ছে, যতগুলো সুযোগ
আমরা পেয়েছি তাতে এটা অসম্ভব ছিল না।' যদিও শেষ পর্যন্ত স্কোরলাইনটা বড় করতে পারেনি
পর্তুগাল, তাই বিদায় প্রথম
রাউন্ড থেকেই। যাবার বেলায় বললেন, 'আমরা আমাদের সেরা চেষ্টাটাই করেছি, কিন্তু পারলাম না।'
২০১২-১৩ মৌসুমের
চ্যাম্পিয়নস লিগের কথাটা মনে করুন। সেমিফাইনালে
প্রথম লেগে রবার্ট লেভানদস্কির ৪ গোলে লণ্ডভণ্ড রিয়াল ফিরতি লেগটা জিতেছিল ২-০তে, আর একটা গোল হলে অ্যাগ্রিগেট ৪-৪ হলেও অ্যাওয়ে গোল
নিয়মে জিতত মাদ্রিদিস্তারাই। রোনালদোর একটা
গোল যে ছিল ডর্টমুন্ডের মাঠে! কিন্তু অনেক সুযোগ পেয়েও ২ গোলের বেশি করতে পারেনি
রিয়াল, তাই দ্বিতীয় লেগ
জিতেও আসলে হারেরই কষ্ট। বিশ্বকাপেও
ঘানার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত জিতল পর্তুগাল, রোনালদো গোল করে ম্যাচসেরাও হলেন। কিন্তু
তাতেও বিদায় পর্তুগালের।
প্রথম ম্যাচে
পেপের লাল কার্ড, ফাবিও
কোয়েন্ত্রোর চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া তো আছেই। শেষ ম্যাচে
চোটের কারণে নামতে পারেননি উগো আলমেইদা, এলদের পোস্তিগাদের কেউই। প্রধান গোলরক্ষক
রুই পেত্রিসিওর চোট, ঘানার সঙ্গে
এদুয়ার্দোও চোট পাওয়ায় মাঠে নামেন বেতো। সব মিলিয়ে
পর্তুগাল দল যেন ভাঙা ঘর। সেই ভাঙা ঘরে
শিব রাত্রির সলতে রোনালদো, তাতে আঁধার
কাটলেও বৃষ্টির জল যে ঠেকানো যায় না! এএফপি
No comments:
Post a Comment