৩ জুলাই রাতে উত্তরায় অপহৃত হয়ে মাইক্রোবাসে ধর্ষিত হন ক্যামব্রিয়ান কলেজের এক শিক্ষার্থী। শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে এসে সেদিনের পাঁচ ধর্ষকের মধ্যে একজনকে চিহ্নিত করলেন তিনি। চিহ্নিত ধর্ষক আপন শুক্রবার ভোরে ডিবি পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ ওই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসেন। সেখানে আপনের লাশ দেখে চিহ্নিত করেন তিনি। সে সময় তার সঙ্গে তার মা-ও ছিলেন।
গত ৩ জুলাই রাতে কয়েকজন মিলে উত্তরা থেকে ক্যামব্রিয়ান কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে। এ সময় লিটন নামে এক নৈশ প্রহরী বাধা দিতে এলে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে। পরে হাসপাতালে মারা যান লিটন। অপহরণ করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে যারা ওই ছাত্রীকে নিয়ে যান, আপন তাদের মধ্যে একজন। অপহরণকারীরা মাইক্রোবাসের মধ্যে সবাই মিলে ধর্ষণ করে কাফরুল ও উত্তরার মাঝামাঝি স্থানে ফেলে রেখে যায় ওই শিক্ষার্থীকে। পরে অজ্ঞান অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
গতকাল শুক্রবার হাসপাতাল মর্গে লাশ চিহ্নিত করার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই শিক্ষার্থী। মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে থাকেন, 'এই সে মা, যে আমার জামা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছিল। আজ ও মরে গেছে মা। বেঁচে থাকলে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করতাম। ওরা কেন আমার সর্বনাশ করেছিল?'
এর আগে শুক্রবার ভোরের দিকে হাতির ঝিল-মেরুল বাড্ডা এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে আপন গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশের দাবি আপন সেখানে একটি মাইক্রোবাসের ভেতর অনৈতিক কাজ করছিল। গোয়েন্দা পুলিশের টহল টিম এগিয়ে গেলে তাদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে আপন। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে আপন গুলিবিদ্ধ হন। সে সময় গুলিতে দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরে আপনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আপনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ বলছেন, সে সময় হাতিরঝিল থেকে একটি পিস্তল, একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে ডিবি পুলিশের এসি শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, নিহত আপনকে অনেকদিন ধরেই খুঁজছিলেন তারা। তার বিরুদ্ধে গুলশান, বাড্ডা ও উত্তরা থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এদিকে ওই শিক্ষার্থীর মায়ের দাবি, ক্যামব্রিয়ান কলেজের দুই শিক্ষকও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছেন। কেননা তারা অনেকদিন ধরেই তার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করছিলেন। এ ঘটনায় পুলিশ ওই শিক্ষার্থীর পূর্ব পরিচিত এক ব্যবসায়ী রুম্মনকে ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
অন্যদিকে আপনের স্ত্রী জেসমিন ও ছোট ভাই পরশ শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে গিয়ে আপনের লাশ সনাক্ত করেন।
জেসমিন জানান, তিন বছর আগে তারা পরিবারসহ ২১ নং মিডফোর্ড এলাকায় থাকতেন। এখন তারা সকলেই গ্রামের বাড়ি নোয়াখালির সেনবাগে থাকেন। আপন সেখানে কয়েকটি পুকুর দেখাশোনা করতেন। গতকাল সকালেই তিনি নোয়াখালি থেকে ঢাকায় আসেন। সকাল ১১টার দিকে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। এরপর আর কথা হয়নি। রাতে তার মোবাইল বন্ধ পান। আজ টিভিতে লাশ দেখে ছুটে আসেন ঢাকা মেডিকেলে।
আপনের ছোট ভাই পরশ বলেন, 'আমার ভাই কেন ধর্ষণ করতে যাবেন? ঘরে এত সুন্দর বউ রেখে কেন অন্য মেয়ের দিকে তাকাবেন তিনি? আমার ভাইয়ের নামে কোনো মামলা নেই। পুলিশ ভুল করে মেরে ফেলেছে। এখন আমার ভাইয়ের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই।'
No comments:
Post a Comment