Friday, April 4, 2014

আজ মনে করে আপনার শিশুটিকে ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল খাওয়ান



আজ দেশের প্রায় দুই কোটি শিশুকে খাওয়ানো হচ্ছে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল। তবে শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুরা এর আওতায় আসবে না। যেসব শিশু গত চার মাসের মধ্যে অভিভাবকদের ইচ্ছায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন খেয়েছে সেসব শিশুকেও খাওয়ানো হবে না। এর আওতায় ৬-১১ মাস বয়সী শিশুকে ১টি নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুকে ১টি লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। একই সাথে শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের  দুধের পাশাপাশি শিশুকে ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানোর জন্য পুষ্টি বার্তা প্রচার করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর হার ৯৮ শতাংশ উন্নীত করার ফলে ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রাতকানা রোগের হার শতকরা ১ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। একই সাথে জন্মের পর পূর্ণ ৬ মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রচার কার্যক্রম গ্রহণের ফলে শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বেড়েছে, যা বর্তমানে শতকরা প্রায় ৬৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

ভিটামিন-এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা বলেন, ভিটামিন-এ শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিন শিশুদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, চোখের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, রোগ সংক্রমণ থেকে চোখকে রক্ষা করে। এ ছাড়া ভিটামিন-এ রক্তস্বল্পতা থেকেও রক্ষা করে থাকে। শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন-এ শিশুমৃত্যু কমায় ২৪ শতাংশ, মিজলসে (হাম) মৃত্যু রোধ করে ৫০ শতাংশ, ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু কমিয়ে থাকে ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া ভিটামিন-এ’র অভাবে শিশুদের রাতকানা, হাম, দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া ও মারাত্মক অপুষ্টির কারণে নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে।

ক্যাম্পেইন উপলেক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ভিটামিন এ খাওয়ানোর ফলে শিশু যে শুধু রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা পায় তা নয়, ভিটামিন এ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল এবং হামের জটিলতা কমায়। ফলে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। এ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এদেশে আমরা প্রায় ২৪ শতাংশ শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করতে পারি।

মন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পেইন দিবসে একটি শিশুও যেন বাদ না পড়ে, সব শিশুকেই যেন ভিটামিন এ ক্যাপসুল  খাওয়ানো হয়। যাদের ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশু আছে সে সব মা-বাবা এবং অভিভাবকরা যেন অবশ্যই তাদের শিশুদের জন্য এ সেবা গ্রহণ করেন। বছরে ২ বার ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে শিশুদের আমরা রাতকানা, অন্ধত্ব, অপুষ্টি ও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারি।
 
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, ছাত্রশিক্ষক, সাংবাদিক সবার সার্বিক সহযোগিতায় দেশব্যাপী ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী কেন্দ্রসহ অতিরিক্ত ২০ হাজার ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ব্রিজের টোল, বিমান বন্দর, রেল স্টেশন, খেয়াঘাট ইত্যাদি স্থানে অবস্থান করবে। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৩ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করবে।

তবে দুর্গম এলাকায় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কোনো শিশু বাদ পড়ে যায় তবে ক্যাম্পেইন পরবর্তী ৪ দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাদপড়া শিশুকে ভিটামিন এ খাওয়ানো হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্র খোলা থাকবে। শিশুদের ভরা পেটে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। কাঁচি দিয়ে ভিটামিন এ ক্যাপসুলের মুখ কেটে এর ভেতরে থাকা তরল ওষুধ চিপে খাওয়ানো হবে। জোর করে বা কান্নারত অবস্থায় ভিটামিন এ ক্যাপসুল  খাওয়ানো যাবে না।

এই কার্যক্রমকে সাফল্যমন্ডিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে অবহিতকরণ সভা করা হয়েছে। ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন পর্যালোচনার জন্য ক্যাম্পেইনের দিন প্রতিটি উপজেলায়, জেলায় ও কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় জন স্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করতে যাচ্ছে। - See 

No comments:

Post a Comment