Monday, April 7, 2014

রাষ্ট্রীয় বাজেটের ধার্য করা অর্থ দিয়ে বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় : নাসিম



বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও ব্যবস্থাপনা যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে সন্তুষ্টির অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তার মতে, জনমানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও এ খাতের সংকটগুলো দূর করতে হলে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা স্বাস্থ্য খাতের বড় সংকট। রাষ্ট্রীয় বাজেটের যে অংশ স্বাস্থ্য খাতকে দেয়া হচ্ছে তা দিয়ে বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গত ২ এপ্রিল যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এসব কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের করিডোরে এক অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকারে স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান নানা সমস্যাসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।



স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গরিবদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এ দেশে বিরাট চ্যালেঞ্জ। এখানে অধিকাংশ মানুষ গরিব ও শ্রমজীবী। এদের জন্য রাষ্ট্রের ব্যয় বাড়ানো দরকার। ব্যবস্থাপনায় ত্র“টির কারণেও সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেককে। কখনও কখনও হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছে না। ডাক্তার থাকলে নার্স থাকছে না, নার্স থাকলেও কর্মচারীরা কাজে মনোযোগ না দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এসব ত্র“টি বিচ্যুতি অবিলম্বে দূর করতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকদের নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে অবহেলা ধরা পড়লে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে বেশকিছু চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।



মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ধনীদের জন্য উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা দেশে রয়েছে। টাকা খরচ করলেই বেসরকারি খাত থেকে সেবা মেলে। কিন্তু গরিবের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা হয়নি। গরিবের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা একমাত্র ভরসা। তাই সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হচ্ছে গরিব মানুষদের। গরিবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হতে চান বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গরিবদের জন্যই সরকারি সেবা সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন।



হাসপাতালে অযত্ন-অবহেলায় অসংখ্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি পড়ে থাকছে। একটি যন্ত্র বিকল হলে তা দিনের পর দিন না সারিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকল রাখার অভিযোগ আছে। যন্ত্র বিকল রাখতে পারলেই বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠিয়ে কমিশন খাওয়ার সুযোগ হয় সংশ্লিষ্টদের। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে উদ্যোগী। একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারী বাইরে রোগী পাঠানোর কাজে জড়িত। তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘এসব অপকর্ম থেকে বিরত থাকুন।’ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেন পড়ে আছে কতদিন ধরে বিকল- সেটা যাচাই করতে মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি কাজ করছে।



সম্প্রতি রাজধানীতে একটি জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিনা দরকারে অনেক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কিনে ফেলা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। এসব যন্ত্র কাদের স্বার্থে কেনা হল সেটা খুঁজে বের করা হবে। দোষী ব্যক্তিরা অবশ্যই শাস্তি পাবেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সমৃদ্ধ করতে চাই। তবে বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য সেবা নিশ্চিত করার কাজটি সরকার একা পারবে না। এজন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও বিনিয়োগে উৎসাহিত করছি। নিয়ম মেনে তারাও সেবা কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শুধু ব্যবসার জন্য স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগকে তিনি ইতিবাচকভাবে দেখেন না। আগে মানুষের সেবার বিষয়টি দেখতে হবে। তারপর ব্যবসা।


বড় ও কর্পোরেট হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোর সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে তারা অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, যে পরীক্ষার প্রকৃত ব্যয় মাত্র ২ টাকা, সেখানে ফি নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এসব কাজ বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও গরিবের জন্য সেবার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিছুদিন আগে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বরাদ্দ সম্পর্কে বলেছেন, এ মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্বে আছে। ব্যবসা তো করছে না। প্রধানমন্ত্রী গরিবের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। তাহলে এ মন্ত্রণালয়কে কেন পর্যাপ্ত টাকা দেয়া হবে না? তিনি বলেছেন, আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বাড়াতে প্রয়োজনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে যুদ্ধ করবেন। 

No comments:

Post a Comment