Sunday, April 6, 2014

ছয় দফা দাবি নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ


গণজাগরণ মঞ্চের ওপর যত বাধাই আসুক ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে গণজাগরণ মঞ্চ। এ লক্ষ্যে মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা।

রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর শুক্রবার পুলিশি হামলার পরদিন রাতেই পরীবাগে বৈঠক করে মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। বৈঠকে হামলা ও পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, মঞ্চের ঘোষিত ছয় দফা দাবির ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল রবিবার রাতে আন্দোলনে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিয়ে বৈঠকে বসেন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

সভায় উপস্থিত ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করতে এবং কয়েক দিনের ঘটনাবলি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। সভায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সব ছাত্রসংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

শাহবাগের উত্তাল দিনগুলোতে গণজাগরণ মঞ্চকে সহায়তা করেছিল দেশের নানা মহল। তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুলিশ প্রশাসনও সহায়কের ভূমিকা রাখে। আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। তবে কয়েক দিন ধরে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়।

মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধনকে ওই দিন রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটায় পুলিশ। বাঁধন অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের ইন্ধনে এবং সরকারের যোগসাজশে পুলিশ এমন বর্বর হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চ সঠিক পথে আছে। যত বাধাই আসুক আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। কারো হুমকি-ধমকিতে মঞ্চের কর্মীরা পিছিয়ে আসবে না।’ কেন এ ধরনের হামলা করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিয়ে সরকার ও জামায়াতের মধ্যে নেগোসিয়েশন চলছে। আর ইসলামী ব্যাংকের টাকা নেওয়ার মাধ্যমে জামায়াতকে হালাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। মূলত ইসলামী ব্যাংকের টাকা নেওয়ার প্রতিবাদের কারণেই মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।’

গত ৩ এপ্রিল রাতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা মঞ্চের কয়েকজন নেতার ওপর চায়ের কেটলির গরম পানি ঢেলে দেয়। এতে আহত মঞ্চকর্মী আদনান মুহাম্মদের বুকের ডান দিক পুড়ে গেছে। বারডেম ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি এখন শয্যাশায়ী। তিনি বলেন, ‘লাখো কণ্ঠের স্লোগানে টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করায়ই ওরা আমাদের ওপর হামলা করেছে।’

শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মঞ্চের মারামারির বিষয়ে কোনো আপডেট খবর নেই। আর এটি ছোট ঘটনা, এ নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই।’

নির্মূল কমিটির উদ্বেগ : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণজাগরণ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থান এবং মঞ্চের সংগঠকদের ওপর পুলিশি হামলায় উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। গতকাল সংগঠনটির নেতারা এক বিবৃতিতে ছাত্রলীগ ও গণজাগরণ মঞ্চকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা নিন্দাজনক। একই সঙ্গে বিবদমান সংগঠন দুটির নেতাদের আরো সংযমী হওয়া দরকার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তরুণদের ভেতরে যে কোনো বিরোধ প্রকাশ্য সংঘর্ষে পর্যবসিত হলে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক ও যুদ্ধাপরাধীরা লাভবান হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সহসভাপতি মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, শামীম আখতার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

সংশোধনী : গতকাল কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ছবির ক্যাপশনে ‘গোলাম রসুলের ওপর পুলিশের নির্দয় হামলা’ ছাপা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হামলার শিকার ব্যক্তিটি গণজাগরণ মঞ্চ নেতা মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধন। অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

No comments:

Post a Comment