Friday, April 4, 2014

শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে পুলিশের লাটিচার্জে বেশ কয়েকজন আহত


শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও গণজাগরণ মঞ্চ একই সময়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় পুলিশ দুই পক্ষকেই লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।  হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার ও মঞ্চের কর্মী মাহমুদুল হক মুন্সীসহ বেশ কয়েকজন সামান্য আহত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এ ছাড়া বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।

শুক্রবারের ঘটনার পর সন্ধ্যায় ইমরান এইচ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ (গতকাল) আমরা আমাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে শাহবাগে আসি। পুলিশ সমাবেশ করতে না দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের সঙ্গে সরকারদলীয় লোকজন ছিল। তারা আমাদের লোকজনকে চিনিয়ে দিচ্ছিল। তারা হামলায়ও অংশ নিয়েছে। পুলিশ ও সরকারদলীয় লোকজনের হামলায় আমাদের ১০ জনের মতো আহত হয়েছে। ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

পরস্পর মুখোমুখি দুই পক্ষই নিজেদের গণজাগরণ মঞ্চ দাবি করছে- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডা. ইমরান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মোমবাতি জ্বালিয়েছিলেন। এখানে একসময় সরকারি দলের লোকজনও এসেছিল। তাই বলে এখানে যারা এসেছিল, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় চলে যায়নি। আমাদের ওপর হামলাকারীরা নিজেদের যে পরিচয়ই দিক না কেন, তারা মূলত সরকারি দলের কর্মী হিসেবেই কাজ করে।’

পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে এখানে দুপক্ষ সমাবেশ ডেকেছিল। আমরা আগেই বলেছি, কেউ সমাবেশ করতে পারবে না। সমাবেশের অনুমতি না থাকায় আমরা তাদের সরিয়ে দিই। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।’

গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রজন্ম চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও গণজাগরণ মঞ্চ পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দেয়। বৃহস্পতিবার রাতে চেয়ারে বসা নিয়ে মঞ্চের কর্মী ও সন্তান কমান্ডের কর্মীরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে মঞ্চের দুই কর্মী আহত হয়। পরে মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হলে সন্তান কমান্ডের কর্মীরাও পাল্টা অভিযোগ এনে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়। 

গতকাল পুলিশ দুপক্ষের ওপরই চড়াও হয় এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ২০-২৫ জন কর্মী বিকেল ৩টার দিকে শাহবাগে জড়ো হয়। সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। এ সময় ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, একই সময় দুই সংগঠন সমাবেশ ডাকায় কাউকে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিছিল নিয়ে সমাবেশ করতে আসে। পুলিশ এ সময় তাদের ধাওয়া দিলে তারা আজিজ সুপার মার্কেটের দিকে চলে যায়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে পুনরায় শাহবাগে ফেরার চেষ্টা করলে পূবালী ব্যাংকের সামনে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এখানে মঞ্চের কর্মী ধীমান আজিজ, সোহাগ আজিজ, টিটু, শামস রশীদ জয় ও ফরিদ আহমেদকে আটক করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ফের সমাবেশ করতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান ও কর্মী পারভেজ আহমেদকে আটক করে পুলিশ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইমরান এইচ সরকার। সেখানে তিনি বলেন, ‘কাল রাতে আমরা দুই দফা হামলার শিকার হয়েছি। প্রথম দফায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। এরপর থানায় দ্বিতীয় দফায় আমরা হামলার শিকার হই।’

এর আগে ইমরান এইচ সরকার অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা হামলা করেছে। তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের পাশে থাকা অন্যতম সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগ নয়, আমাদের ওপর ইমরান এইচ সরকারের ছেলেরা হামলা করেছে।’

এদিকে প্রজন্ম চত্বরে বৃহস্পতিবার রাতে দুপক্ষের মারামারির ঘটনায় শাহবাগ থানায় দুটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ মামলা হয় বলে জানান শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক কৃষ্ণ চন্দ্র দাস।

গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নরেন্দ্র সাহা জয় বাদী হয়ে তাঁদের ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা করেন। এতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান ও যুবলীগ নেতা নাসিম আল রূপকসহ আটজনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- আবির, শিশির, শেখ আসলাম, এম এম শাহিন, মেহবাহ ও বাবুল।

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের পক্ষে সংগঠনের সভাপতি মেহেদী হাসান বাদী হয়ে তাঁদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে গণজাগরণ মঞ্চের তিন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার আসামিরা হলেন- মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, অন্যতম সংগঠক মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধন ও কর্মী নরেন্দ্র সাহা জয়।

No comments:

Post a Comment