Monday, March 31, 2014

সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের আশঙ্কায় কাটাচ্ছে না মোদিকে ঘিরে


তাঁর নাম শুনেই পিছিয়ে যান কেউ কেউ, কেউ বা তাঁর জনপ্রিয়তার কথা স্বীকার করতেই নারাজ। ভারতীয় মুসলিমরা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের মানুষ কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদীর ধ্বজাধারী মোদির প্রশ্নে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে।
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গার ঘটনা ঘটে অযোধ্যায়, ১৯৯২ সালে। এতে প্রাণ হারায় দুই হাজারের বেশি মানুষ। সেই ঘটনার কেন্দ্রস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে তেহরি বাজার মসজিদে মোহাম্মদ সাগেরের মতো ইবাদতকারীর সংখ্যাই বেশি, যারা ওই দাঙ্গার ঘটনার সময় নিতান্তই নাবালক ছিল। কিন্তু ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময়ের কথা তাদের মনে দাগ কেটে আছে। সাগের বলে, 'মুসলিমদের পিটিয়ে কুপিয়ে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে- এসব তাকিয়ে দেখার চেয়ে আর কি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
হতে পারে?'
দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিবুর রেহমানের মতে, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির নির্মাণ অভিযানের অন্যতম সংগঠক হিসেবে 'জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে জোরালো অভিষেক ঘটে' ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা মোদির। পরে নিজ রাজ্যের মুসলিমবিদ্বেষী দাঙ্গায় 'ভূমিকা রেখে জাতীয় নেতা' বনে যান তিনি। রেহমান অকপটে বলেন, 'মোদির ব্যাপারে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ আছে।' তাঁর মতে, 'মুসলিমদের সন্ত্রস্ত হওয়া অমূলক নয় এ কারণে যে তারা জানে, তাদের প্রতি এই ব্যক্তির (মোদি) যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ নেই।' রেহমান বলেন, মোদির অতীত বলছে, তিনি বরাবরই সংখ্যালঘুদের এড়িয়ে চলেছেন; এমনকি নির্বাচনী প্রচারের সময়ও মুসলিমদের কাছ ঘেঁষেননি তেমনটা। সুতরাং তাঁকে নিয়ে মুসলিমদের ভয়টা যৌক্তিক বলে দাবি রেহমানের। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ মুসলিম।
মোদি কট্টর নিরামিষভোজী। প্রতিদিন নিয়ম করে যোগ ব্যায়াম করেন। বালক বয়সেই তৃণমূল পর্যায়ের হিন্দু জাতীয়তাবাদী গ্রুপে যোগ দেন। আদালত নির্দোষ বলে রায় দিলেও অনেকের মতে, গুজরাট দাঙ্গার রক্তের দাগ তাঁর হাতে। এ ছাড়া বিজেপির নির্বাচনী অঙ্গীকারের তালিকায় এখনো রয়েছে রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টি। কট্টর হিন্দুদের বিশ্বাস, অযোধ্যায় ভগবান রামের জন্মস্থানের ওপর বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। তাই ওই মসজিদ ভেঙে সেখানে রামমন্দির তৈরির দাবিতে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি ১৯৯০ সালে দেশব্যাপী পদযাত্রা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর একদল কট্টর হিন্দু ১৬ শতকে নির্মিত বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়।
গত জুলাইয়ে মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী অমিত শাহ অযোধ্যা সফরকালে রামমন্দির নির্মাণের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এতে অনেকেই ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন। অযোধ্যায় মুসলিমদের ইবাদতের অধিকার রক্ষায় জড়িত গ্রুপের প্রধান হাজি মাহবুব আহমেদ বলেন, 'মোদি নয়, আমার জীবদ্দশায় মোদির মতো কাউকে আর দেখতে চাই না।'
যদিও মোদি ২০০২ সালের দাঙ্গার জন্য সম্প্রতি 'দুঃখ' প্রকাশ করেছেন। "আমার ধর্ম, 'জাতি আগে', ভারত আগে" বলে প্রচার চালাচ্ছেন। তবে তা সত্ত্বেও তিনি হিন্দুদের তীর্থস্থান বারানসি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কথায় কথায় প্রায়ই দেশের '৭৫ শতাংশ মানুষ' ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের অবহেলার শিকার বলে অভিযোগ করেন তিনি। অনেকেই মনে করেন, এই ৭৫ শতাংশ বলতে মোদি হিন্দুদেরই বোঝান।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) শারদ শর্মা বলেন, 'যদি কোনো হিন্দু দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে, তবে আমরা তাদের সংসদে রামের জন্মভূমি মুক্ত করতে আইন পাসের কথা বলব।' তাই মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় মুসলিমরা আগামী দিনগুলোতে আরো খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। প্রসঙ্গত, বর্তমানে অযোধ্যার স্পর্শকাতর জায়গাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সূত্র : এএফপি।

No comments:

Post a Comment