বিনোদন ডেস্ক :
১৯৯৮ সাল। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার
খেতাব জিতলেন ইসরায়েল সুন্দরী লিনর আবারগিল। খেতাব জেতার পর তাঁর চোখে যে অশ্রু ছিল, তা কি শুধুই আনন্দের? না। লিনরের বয়স তখন
মাত্র ১৮ বছর। ছোটবেলা থেকেই সেরা
সুন্দরী হওয়ার যে স্বপ্ন বুকে লালন করেছিলেন তিনি। তাই সে স্বপ্ন বাস্তব
হওয়ার পর আনন্দ অশ্রু খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর চোখের জলের পেছনে ছিল করুণ ও ভয়ঙ্কর এক কাহিনী। বিশ্বসুন্দরীর খেতাব
জেতার মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে ধর্ষিত হয়েছিলেন ইসরায়েলের এই কন্যা।
কিন্তু আর দশটা মেয়ের মতো ধর্ষণের এই ঘটনা
চেপে যাননি লিনর। তিনি ঐ ব্যক্তির
বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। জনসমক্ষে বিচারের জন্য সোচ্চার হন। যার ফলে ঐ ব্যক্তি
কাঠগড়াতে দাঁড়াতে বাধ্য হয় এবং তাকে ১৬ বছরের কারাদ- দেয় আদালত। এই একটি মাত্র ঘটনা
ইসরায়েলের সব নারীদের স্তব্ধতাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে ওঠে। ফলে এখন কেউ যৌন
হয়রানির শিকার হলে আর চুপ করে থাকে না। নিজ দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের
প্রতীক হয়ে উঠেছেন লিনর।
সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ
করা হয়েছে, যার নাম ‘ব্রেভ মিস ওয়ার্ল্ড'। যেখানে তিনি তাঁর এবং যৌন হয়রানির শিকার আরো অনেক নারী নিজেদের
হয়রানির কথা অকপটে বলেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই
জীবনে প্রথমবারের মতো নিজেদের জীবনের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। ধর্ষিতা নারীদের
উদ্দেশ্যে লিনর সংবাদ সংস্থা এএপিকে বলেছেন, ‘‘তুমি যদি জীবনে
ভয়ঙ্কর কোনো মানসিক আঘাত পাও, তবে তা অন্যকে বলো, নিজের কষ্টটাকে প্রকাশ কর৷ কেননা তুমি এটা না করলে এটি একটি
টিউমারের আকার ধারণ করবে, যা দিন দিন বড় হতে
থাকবে এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেটা তোমার সাথেই থেকে যাবে।''
প্রামাণ্য চিত্রের পরিচালক সিসিলিয়া পেক। তিনি তাঁর ডকুমেন্টারিতে
লিনরের বিভিন্ন বয়স ও ভূমিকা তুলে ধরেছেন। ধর্ষিত কিশোরী, স্পষ্টভাষী আইনজীবী
ও সমাজকর্মী, একজন স্ত্রী ও একজন মায়ের জীবনকে তুলে
ধরেছেন তিনি। প্রামাণ্য চিত্রে
লিনর এর বাবা-মা, স্বামী এবং সাবেক
প্রেমিকের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।
চার বছর ধরে প্রামাণ্য চিত্রটির চিত্র
ধারণ করা হয়েছে। যেখানে মার্কিন
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণীদের যৌন হয়রানির কথা
লিনর শুনছেন মন দিয়ে। সেখানে হলিউড সেলিব্রেটি ফ্রান ড্রেসার এবং জোয়ান কলিনসের
মতো তারকারা ছিলেন, যাঁরা প্রথমবারের
মতো জনসমক্ষে স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা এমন ব্যক্তিকে
বিয়ে করেছেন, যে তাঁদের বহুবার ধর্ষণ করেছিল।
পেক এর কিন্তু অন্য একটি পরিচয়ও আছে। তিনি কিংবদন্তি
হলিউড তারকা গ্রেগরি পেক এর মেয়ে। পেক জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রের
প্রতি ছয় জন নারীর মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হন। তাই তাঁরা ব্রেভ
মিস ওয়ার্ল্ড-এর নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেছেন, যেখানে ধর্ষণের
শিকার নারীরা তাঁদের মনের কথা বলবেন। তিনি আরো জানালেন, এরই মধ্যে অন্তত
৩ লাখ মানুষ ওয়েবসাইটে ভিজিট করেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। প্রতিদিন আসছে লাখো
ই-মেল।
এবার শোনা যাক লিনরের ঘটনা। সে ঘটনা আসলেই ভয়ঙ্কর। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে
ইটালির মিলানে মডেলিং এর চাকরি খোঁজার জন্য গিয়েছিলেন লিনর। সেখানে মিশরীয় বংশোদ্ভূত
একজন ইসরায়েল নাগরিক উরি নূর-কে ইসরায়েলে ফেরার বিমানের টিকেটের ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন
তিনি। নূর সেখানে একটি
ট্রাভেল এজেন্সি চালাতো। নূর তাঁকে বলেছিল, মিলান থেকে কোনো
বিমান নেই। তাই লিনরকে সে প্রস্তাব
দিয়েছিল, গাড়ি করে রোমে পৌঁছে দেওয়ার। কারণ, সেখান থেকে ইসরায়েলের বিমান পাওয়া সহজ হবে।
যাওয়ার সময় একটি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে লিনরকে
ঝোপের মধ্যে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় নূর। তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, শ্বাসরোধ করে এবং
ছুরি ধরে তাঁকে ধর্ষণ করে। ঐ অবস্থা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন লিনর এবং নিজের মাকে
ফোন করেন। সে সময় তাঁর মা
পরামর্শ দেন যাতে গোসল না করে পুলিশের কাছে গিয়ে লিনর অভিযোগ দাখিল করে এবং হাসপাতালে
গিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করে সব তথ্য পুলিশকে দেয়। ঐ তথ্য থেকেই নূরকে
আটক করা হয় এবং ইসরায়েলের আদালত তাকে শাস্তি দেয়।
No comments:
Post a Comment