Saturday, March 22, 2014

স্যালাইন মিশিয়ে রক্ত বিক্রি


দর্পণ ডেস্ক - 
ছলে-কৌশলে আবারও অবৈধ ব্লাডব্যাংকের কারবার শুরু হয়েছে। পুরনো অভিযুক্তরাই নতুন পরিচয়ে এ ব্যবসা চালু করে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। অভিযুক্তদের তথ্য অনুযায়ী, মাদকসেবীরা মাত্র এক থেকে দেড়শ’ টাকার বিনিময়ে তাদের কাছে নিজের রক্ত বিক্রি করে। সেই রক্ত তারা বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে বিক্রি করে এক থেকে দেড় হাজার টাকায়। 


এছাড়াও এক ব্যাগ রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে দুই ব্যাগ রক্ত বানানো হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর বকশিবাজারে মাদকাসক্ত ও পেশাদার রক্তদাতার রক্তের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসার অভিযোগে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা অবৈধ ব্লাডব্যাংকটির মালিকসহ তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিও সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খুব কাছাকাছি আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ১ নম্বর বকশিবাজারে (২য় তলা) ঢাকা ব্লাডব্যাংক সেন্টারে শনিবার অভিযান চালান র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে মাদকাসক্ত এবং পেশাদার রক্তদাতাদের রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া রিপোর্টে ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল করে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে রক্ত বেচাকেনার অভিযোগে তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 


দণ্ডিতরা হলেন- ব্লাডব্যাংকের মালিক মোঃ খোকন, টেকনিশিয়ান রবিউল ইসলাম ও পিয়ন রাসেল হোসেন। এর মধ্যে খোকনকে দুই বছর ও বাকি দুজনের এক বছর করে সাজা হয়। এরা দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করে আসছে।



ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা যুগান্তরকে বলেন, অভিযানের সময় ওরা পেশাদার রক্তদাতা ও মাদকসেবীর কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ করছিল। তাছাড়া পরীক্ষা ছাড়াই ডাক্তারের জাল রিপোর্ট তৈরি করে রক্ত বিক্রয়ের সময় অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরা হয়। তিনি বলেন, রক্তের পাঁচটি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক (এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়া) হলেও শুধু গ্র“প পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল করার ফলে এ রক্ত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।



নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, সার্বক্ষণিক ডাক্তার ও দক্ষ টেকনিশিয়ান, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি ছাড়া সংকীর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্লাডব্যাংকের কাজ চালানো গর্হিত অপরাধ। রক্তদাতাদের পরিচয় ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিস্তারিত বিবরণীর রেকর্ড রাখা বাধ্যতামূলক হলেও তা নেই। মাদকসেবীদের রক্ত হওয়ায় তাতে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব কম থাকে এবং তাদের অনিরীক্ষিত রক্তের মাধ্যমে রক্তবাহিত রোগ সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।


ভ্রাম্যমাণ আদালতের তথ্য অনুযায়ী, আগেও একই অপরাধে ইতিমধ্যে ২৭টি অভিযানে ৫১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়। সিলগালা করা হয় ব্লাডব্যাংক। অভিযানের সময় দেখা যায়, সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি এই ব্লাডব্যাংক থেকে রক্ত কিনে নামছিলেন। পিজি হাসপাতালে ভর্তি থাকা তার এক আত্মীয়ের জন্য তিনি এ রক্ত কিনেছেন। সঙ্গে রক্ত পরীক্ষার একটি রিপোর্ট ছিল। রিপোর্টে ডাক্তারের স্বাক্ষর ছিল। অথচ ওই ব্লাডব্যাংকে ডাক্তার বা নার্স পাওয়া যায়নি।


 ব্লাডব্যাংকের মালিক খোকন স্বীকার করেন, তিনি রবিউলকে দিয়ে ডাক্তারের স্বাক্ষর করিয়েছেন। টেকনিশিয়ান রবিউল স্বীকার করেন, পরীক্ষা ছাড়াই রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করেছেন এবং মালিকের নির্দেশে ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল করেছেন। যে রক্ত বিক্রি করেছেন সেটির রক্তদাতার (মাদকসেবীর) সঠিক পরিচয় জানা থাকে না বলে ইচ্ছামতো নাম দিয়ে দেয়। তিনি স্বীকার করেন যে, এক ব্যাগ রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে দুই ব্যাগ রক্ত তৈরি করা হয়। অভিযানের সময় আরও একজন ব্যক্তি রক্ত কিনতে এসেছিলেন, পিয়ন রাসেল হোসেন রক্তের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করছিল।


ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা বলেন, সারা দেশে ৭৭টি বেসরকারি ব্লাডব্যাংকের অনুমোদন রয়েছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কতিপয় অসাধু ব্লাডব্যাংকের অপতৎপরতা স্বাস্থ্য খাতকে অনিরাপদ করে তুলছে। রক্তদানে সাধারণ মানুষের ভীতি এবং অবহেলার কারণে পেশাদার রক্তদাতাদের ওপর নির্ভর করে এসব অসাধু ব্লাডব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা করছে। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অমানবিক রক্ত ব্যবসার বিরুদ্ধে সারা দেশে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানে র‌্যাব-২ এর উপপরিচালক মেজর হিমাদ্রী শিখর রায় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। 

No comments:

Post a Comment