Wednesday, March 26, 2014

নিখোঁজ বিমানের ১২২ টুকরা ধ্বংসাবশেষ সনাক্তকরণ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক -

বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে এবং আরোহীদের কেউ বেঁচে নেই-  মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের এ দাবি মানতে রাজি নয় আরোহীদের স্বজনরা, যাদের বেশির ভাগই চীনের। তাদের পক্ষ থেকে অকাট্য প্রমাণের দাবি করা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বজনদের জন্য বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করে আদালতে পিটিশন দিয়েছে একটি আইনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান। 

এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল বুধবার থেকে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। আর এ কাজে সহায়তার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা আরো কিছু ছবি সরবরাহ করেছে ফ্রান্স। এতে ১২২টি বস্তু চিহ্নিত করা হয়েছে। ফ্রান্সের সন্দেহ, মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান এমএইচ৩৭০-এরই ধ্বংসাবশেষ এগুলো।

প্রমাণ দাবি স্বজনদের : মালয়েশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সান্ত্বনা, সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি, ক্ষতিপূরণের আশ্বাস- কোনো কিছুতেই এমএইচ৩৭০-এর আরোহীদের স্বজনদের ক্ষোভ কমছে না। এই ফ্লাইটে মোট ২৩৯ জন আরোহী ছিল, তাদর মধ্যে ১৫৩ জনই চীনা। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘোষণায় শোকের সবচেয়ে বড় ধাক্কাই গিয়ে পড়েছে চীনে। ক্ষোভও সেখানেই বেশি। 

এই ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টাতেই গতকাল চীনে নিযুক্ত মালয়েশীয় রাষ্ট্রদূত ইসকান্দার সারুদিন বেইজিংয়ের এক হোটেলে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ চান তাঁরা, যা বাস্তবিক অর্থেই মালয়েশিয়ার হাতে নেই। এমনকি উপগ্রহচিত্রে কিংবা বিমান থেকে খালি চোখে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে যেসব সন্দেহজনক বস্তু ভাসতে দেখা গিয়েছিল, তাদের একটিও এখনো উদ্ধার হয়নি। বৈঠকে তীব্র হেনস্তার শিকার হন রাষ্ট্রদূত ইসকান্দার সারুদিন।

স্বজনদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, শুরুর দিকে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য নানা সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। এখন সেগুলোও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে রাষ্ট্রদূত জানান, বেইজিং কর্তৃপক্ষ তাদের ওই কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করার পর সহায়তাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর বক্তব্য স্বজনদের শান্ত করতে পারেনি।
একজন বলে ওঠেন, ‘কোনো প্রমাণ থাকলে তা-ও মেনে নিতাম। কিন্তু স্রেফ কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত?’
১৭ দিন ধরে উৎকণ্ঠা আর আশার দোলাচলে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে স্বজনদের। এরপর যা তাঁদের জানানো হলো, তা মোটেও প্রমাণ ছাড়া মানতে চান না পরিজনরা।

আইনি ব্যবস্থা : শিকাগোভিত্তিক রিবেক ল চার্টার্ড জানিয়েছে, দুটি কম্পানিকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণের জন্য ইতিমধ্যেই তারা ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেছে। কম্পানিটির কর্মকর্তা মনিকা কেলি বলেন, ‘প্রতি যাত্রীর জন্য কয়েক লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করছি আমরা। এ বিষয়ে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতাও রয়েছে।’

অভিযান আবার শুরু : গতকাল থেকে আবারও নিখোঁজ বিমানের সন্ধানে অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল থেকেই অস্ট্রেলিয়ার এইচএসএএস সাক্সেসের পাশাপাশি এ কাজে যোগ দিয়েছে একটি চীনা জাহাজও। মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী হিশামুদ্দিনের মতে, ক্রমশ তল্লাশি অভিযানের এলাকা গুটিয়ে আনছেন তাঁরা। শুরুতে প্রায় সাড়ে ২২ লাখ বর্গ নটিক্যাল মাইল এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালানোর কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এবার জানালেন, এখন থেকে পার্থের পশ্চিমে প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার বর্গ নটিক্যাল মাইল এলাকা খুঁজে দেখা হবে।

১২২টি বস্তু : মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান, ফ্রান্সের পাঠানো উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে আরো ১২২টি বস্তু দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এগুলো এমএইচ ৩৭০-এর ধ্বংসাবশেষ। গত রবিবার তোলা এই ছবিগুলো ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার উদ্ধার সমন্বয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ছবির কোন কোন বস্তু এক মিটার লম্বা; আবার ২৩ মিটার লম্বা বস্তুও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বস্তু বেশ উজ্জ্বল, মনে হচ্ছে ধাতব পদার্থ এগুলো। নিখোঁজ বিমানের পরিস্থিতি মোকাবিলায় মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের ভূমিকা তীব্র সমালোচিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে হিশামুদ্দিন বলেন, ‘ইতিহাসই আমাদের যথার্থ বিচার করবে।’

ব্ল্যাকবক্সের সন্ধান : ‘ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার লোকেটর’ বা ব্ল্যাকবক্সের সন্ধান পেতে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই একটি লকেটর অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছে। আজ সেটার পৌঁছানোর কথা। মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী হিশামুদ্দিনের মতে, সেটিকে নির্দিষ্ট অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হবে ২৮ মার্চ। ৫ এপ্রিল সেটি গন্তব্যে পৌঁছবে। অর্থাৎ আরো ১০-১১ দিনের অপেক্ষা। হিসাব বলছে, তার পর বিমানের ব্ল্যাকবক্সের ব্যাটারির আয়ু থাকবে আর মাত্র চার দিন। অর্থাৎ তার মধ্যে বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে না পেলে অনুসন্ধান শেষ হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত।

‘নেপথ্যে সিআইএ’ : এই ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ভেটেরানস টুডে-র সিনিয়র এডিটর গর্ডন ডাফের। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই দাবি করেন। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে খবরটি প্রকাশিত হয়। বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল- এ কথা মানতেও নারাজ গর্ডন ডাফের। তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থায় বিমানটির নিয়ন্ত্রণ সিআইএ গ্রহণ করতে পারার মতো ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।’

No comments:

Post a Comment